‘বন্ধ’ মানে মনের আকাশে রংধনুর রঙিন মেলা। স্মৃতির আকাশে ডানা মেলে উড়া মুক্ত পাখি। বন্ধুত্ব মানে গোপন কথার অনেকখানি ভাগ, প্রান খোলা হাসির সাথে একটুখানি রাগ। বন্ধুত্ব মানে দুষ্টুমি আর একটু অভিমান, মনের মাঝে কোথায় যেন একটু খানি টান। বন্ধুত্বের ছোঁয়ায় সবাই ফিরে যায় ফেলে আসা শৈশব, কৈশোর আর ঝলমলে উচ্ছ্বাসে ভরা তারুণ্যে।
‘একটি ভালো বই একশ জন বন্ধুর সমান। কিন্তু একজন ভালো বন্ধু একটি লাইব্রেরীর সমান।’ এমনিভাবে বন্ধুর বর্ণনা দিয়েছিলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এ.পি.জে আব্দুল কালাম। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল, বন্ধু তেমনি একটি বিশেষ জাতের মানুষ।’
বিশ^বিদ্যালয় জীবনে বন্ধুত্ব যেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা নদীর মোহনা। সকলে মিলে একাকার। কোথায়ও আর নিজেকে খুঁেজ পাওয়া যায় না। অনেকগুলোর আত্মার একটি প্রাণ। ১২ মার্চ ছিলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষপূর্তি। সেদিন বন্ধুত্ব আর সম্প্রীতির মিলনমেলায় মিলিত হয়েছে সবাই।
একে একে কেঁেট গেছে চারটি বছর। ক্যাম্পাসের প্রতিটি স্থান যেন তাদের স্মৃতির কথা বলে। সেই স্মৃতিকে গেঁেথ রাখার জন্যই ছিলো তাদের এই আয়োজন। ‘প্রবল প্রলয়ে পয়তাল্লিশ প্রনয়ে’ স্লোগানে সবুজের রাজ্য সেদিন হয়েছে রঙিন। লাল-নীল আর হলুদের আবিরে প্রিয় বন্ধুরা মিলে মেতে উঠেছিলো রঙের মেলায়। সেদিন ¯িœগ্ধ সকালে বর্ণিল র্যালিতে প্রিয় ক্যাম্পাসে ঘুরেছে সবাই। সকলের একটাই পরিচয় ‘পয়তাল্লিশ’। তাইতো রঙের মাঝে কাউকে চিনা না গেলেও সকলেই যে তাঁর চিরচেনা বন্ধু। আনন্দ আর উল্লাসে স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো আবার নতুন করে স্মৃতির পাতায় বন্দি হলো।
সাদা টি-শার্ট যেন স্মৃতির অ্যালবাম। অ্যালবামে কী ছিলো না? চার বছরের স্মৃতি যেন নিখুতভাবে অঙ্কিত হয়েছে। বন্ধুদের সেই ভালোবাসার স্মৃতি স্বযন্তে রেখেছে সবাই।
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের চতুর্থবর্ষের মাইদুল ইসলাম বন্ধুত্বের স্মৃতির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘এখানেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা। এই বন্ধুত্ব জাতি-ধর্ম-বর্ণের উর্দ্ধে উঠতে শেখায়, শেখায় সহিষ্ণুতা। বন্ধু ছাড়া ক্যাম্পাস যেন মরুভূমি। প্রয়োজনে বন্ধুরাই অবতীর্ণ হয় মা, বাবা, ভাইয়ের ভূমিকায়।’
এই সেই ক্যাম্পাস যেখানে আছে বন্ধুদের সাথে কাটানো গণরুমের হাজারো স্মৃতি। শহীদ মিনার, বটতলা, মুক্তমঞ্চ, টিএসসি, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, বৃন্দাবন, টারজান পয়েন্ট, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ কোথায় বিচরণ ছিলো না তাদের? গল্প-আড্ডা, গান আর দুষ্টুমিতে পার হয়েছে সময়গুলো। তাই সকল স্মৃতি যেন উকিঁ দিচ্ছে দল বেঁধে।
আয়োজনের শুরু টেন্ট তৈরির মধ্য দিয়ে। সেটাই ছিলো সকলের মূল আকর্ষণ। বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরের পাশে ছিলো সেই ভালোবাসার আঙ্গিনা। পশ্চিম আকাশে লাল বর্ণ মানেই পদচারণায় মুখরিত দুই হাজার শিক্ষার্থীর একটি ঘর। জমে উঠতো বন্ধুদের আড্ডা-গল্প আর গানে।
আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে কালোর মাঝে লাল রঙের টি-শার্টে বসন্তের মুক্ত আকাশে পাখির মত উড়েছিলো সবাই। দল বেঁেধ হাঁটা, মন খুলে গান গাওয়া, বন্ধুদের সাথে ছবি তোলা, নিজেদের আনন্দ ছোট ও বড় ভাই-বোনদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া নিয়ে ব্যস্ততায় দিন কাঁটে তাদের।
সন্ধ্যায় মুক্তমঞ্চে ছিলো ফানুস উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া বৃক্ষরোপণ, পথশিশুদের খাদ্য বিতরণ, মুভি উৎসব, ক্যাম্পাস পরিষ্কার ও ডাস্টবিন স্থাপন কর্মসূচিও পালন করে তারা।
খলিলুর রহমান
শিক্ষার্থী
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ